শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৯:৩১
ইস্তেগফার কীভাবে পার্থিব জগতের ঘটনাপ্রবাহকে প্রভাবিত করে

জীবনে আধ্যাত্মিকতার প্রভাবকে স্বীকার করা কখনোই বস্তুগত কারণের গুরুত্ব কমিয়ে দেখা নয়। বরং এর অর্থ হলো—দৃশ্যমান উপাদানের পাশাপাশি ইস্তেগফারের (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) মতো আধ্যাত্মিক উপাদানও রয়েছে, যেগুলো বাস্তবিকভাবেই পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব বিস্তার করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইস্তেগফারের উপকারিতা দুনিয়া ও আখিরাত—উভয় দিকেই অসংখ্য। এর আত্মিক প্রভাব সুস্পষ্ট হলেও দুনিয়ার জীবনে এটি কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখে, সেই বিষয়টি একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

ইসলামী দৃষ্টিতে মানবকর্ম সাধারণত তিন ধরনের ফলাফল সৃষ্টি করতে পারে: প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং অদৃশ্য। কুরআনের আলোকে বোঝা যায় যে সকল সৃষ্টিই আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত (সূরা আলে ইমরান: ১০৯; সূরা ফাতির: ১৮)। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছার মাধ্যমে বিভিন্ন ‘কারণ’ সৃষ্টি করে দুনিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসব কারণ কেবল দৃশ্যমান ও প্রাকৃতিক উপাদানে সীমিত নয়; এমন আধ্যাত্মিক কারণও রয়েছে, যেগুলো মানুষের জ্ঞান ও ইন্দ্রিয়গম্যের বাইরে এবং কেবল ওহির শিক্ষা দিয়েই জানা সম্ভব।

কুরআনে বলা হয়েছে—মানুষের কর্ম, বিশ্বাস ও আচরণ সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। মানুষ যখন তার ফিতরাত—অর্থাৎ আল্লাহপ্রদত্ত পবিত্র প্রকৃতি—অনুযায়ী সৎভাবে আচরণ করে, তখন তার জন্য বরকতের দ্বার উন্মুক্ত হয়। আর যখন সে তার ফিতরাতের পরিপন্থী হয়ে ভুল পথে অগ্রসর হয়, তখন তা ধ্বংস ও বিপর্যয়ের কারণ হয় (সূরা রূম: ৪১; সূরা আরাফ: ৯৬; সূরা রাদ: ১১; সূরা শুরা: ৩০)।

এই সম্পর্কগুলোর অনেকটাই মানুষের বোঝার মধ্যে আসে, আবার কিছু বিষয় মানবজ্ঞানকে অতিক্রম করে। এক কুদসি হাদিসে আল্লাহ তাআলা তাঁর মহিমার শপথ করে বলেন,
“যে ব্যক্তি তার নিজ ইচ্ছার উপর আমার ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেয়, আমি তার অন্তরে তৃপ্তি দান করি, তাকে আখিরাতমুখী করি, আসমান–জমিনকে তার রিযিকের জামিন করি, এবং বণিকদের সঙ্গে তার ব্যবসায় আমি অংশীদার হয়ে যাই।”

হাদিসটির শেষ অংশ থেকে বোঝা যায় যে বাণিজ্য হারাম নয়; বরং বাজারের ওপর একটি আল্লাহপ্রদত্ত নীতি ও ব্যবস্থা কার্যকর থাকে, যা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবসার সাফল্য বা কল্যাণ নির্ধারণ করে।

ইস্তেগফারের অর্থনৈতিক প্রভাব—যেমনটি সূরা নূহের ১০–১২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে—দ্বিমুখী। প্রথমত, প্রকৃত ইস্তেগফার শুধু মুখের ভাষায় ক্ষমা চাওয়ার নাম নয়; বরং নৈতিক ও চরিত্রগত দুর্নীতি থেকে বাস্তবিকভাবে মুক্ত হওয়ার আন্তরিক প্রয়াস। এর ফলে মানুষের মনোভাব ও আচরণ বদলে যায়—যা স্বাভাবিকভাবেই কাজের গুণগত মান এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়।

দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ আছে—ইস্তেগফারের এমন কিছু অতিলৌকিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাবও রয়েছে, যা মানুষের দুনিয়াবি জীবন—বিশেষত আর্থিক অবস্থা—উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha